রোহিঙ্গারাও মানুষ !

 রোহিঙ্গারাও মানুষ ! 


                    সম্প্রতি আমি আমার এক বন্ধুর মোবাইল ফোনে ইউটিউব ( লিংক : https://goo.gl/MboSqY ) ভিডিওতে দেখছিলাম : জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বহমান এক নদীর ধারে চরতে থাকা একপাল বুনো ষাঁড়ের দল থেকে একটাকে পায়ে কামড়ে ধরে এক কুমির জলে টেনে নামানোর প্রচন্ড চেষ্টা চালাচ্ছে, আবার মাঝে মাঝে জলে নামিয়েও আনছে । কিন্তু তার পরমুহূর্তে ষাঁড়টাও আবার পায়ে কামড়ে ধরে থাকা অবস্থায় কুমিরটাকেও ডাঙায় তুলে আনছে । দীর্ঘক্ষণ ধরে এই খাদ্য - খাদকের লড়াই এবং বাঁচার লড়াই চলতে থাকলো । তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচার লড়াই জয়লাভ করলো । কারণ, ত্রাতার ভূমিকায় এসে পড়লো এক প্রকান্ড জলহস্তী । জলহস্তীটি কিন্তু মানুষের মত বিবেক - বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী নয় , তবুও সে ষাঁড়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কুমিরকে মাথা দিয়ে এমন একটা বজ্রাঘাত হানলো যে , কুমির শেষ পর্যন্ত ষাঁড়টাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো , আর ষাঁড়টা খোঁড়াতে খোঁড়াতে জঙ্গলের মধ্যে নিজ বাসভুমিতে চলে গেল ।

                     উল্লেখ্য ২০১২ সাল থেকে সাবেক আরকান বা বর্তমান রাখাইন রাজ্যে শুরু হওয়া রাষ্ট্রীয় মদতে সেনা ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত রোহিঙ্গা বিরোধী দাঙ্গায় কয়েক হাজার মুসলিম নর - নারী , শিশু , বৃদ্ধ - বৃদ্ধা খুন হয়েছেন ; মানুষকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে কয়লা করে দেওয়া হচ্ছে ; নারীরা নির্যাতিত ও ধর্ষিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত । বর্বর এই গণহত্যালীলা বর্তমানে চরমতম পর্যায়ে পৌঁছেছে । তাছাড়া সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে রোহিঙ্গার যেসব শিশু , নর - নারী , বৃদ্ধ - বৃদ্ধার পা মাথা ও অন্নান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করা , জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গুলি করে হত্যা করার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে - যাহাতে পশুরাও লজ্জা পাবে ।


                     এপর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখের অধিক রোহিঙ্গা মুসলিম ও কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ জন্মস্থান বসত ভিটে  থেকে উচ্ছেদ হয়ে বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন , এবং এই উদবাস্তু স্রোত অব্যাহত । আর এই জঘন্য মনুষ্য নিধনযজ্ঞ ও জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশই । এইসব নারকীয় নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখে নোবেলজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আর্চ বিশপ  ডেসমন্ড টু টু খোলা চিঠিতে সু-কি-কে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেছেন এই নীরবতার জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হবে । এই চরমতম অন্যায়-জুলুম-নির্যাতনের তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন অন্যান্য নোবেলজয়ী শান্তির দূত দলাই লামা , ডঃ মহম্মদ ইউনুস , মালালা ইউসুফজাই , কৈলাস সত্যার্থী প্রমুখ । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় - বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা আজ হতাশা জনক । ভারতের পঞ্চশীল নীতি এবং নেহেরু - টিটো - নাসেরের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন আজ ইতিহাস । আমরা জানি আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদর্শ মহাপুরুষ হলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও গৌতম বুদ্ধ । কিন্তু অবাক-নির্বাক হয়ে দেখছি বিবেকানন্দের ' জীবে প্রেম করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর ' বাণী গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম ধর্ম - ' বুদ্ধং শরণাম গচ্ছামি , সংঘম শরণাম গচ্ছামি , ধর্ম্যং শরণাম গচ্ছামি ' বাণী আজ ভূলুন্ঠিত । বিচারের বাণী আজ নিভৃতে কাঁদে , বুদ্ধের চোখে আজ জল । তাই অবাক হয়ে আজ আমরা দেখছি সমগ্র বিশ্ব যখন মায়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান সুকি-কে ধিক্কার জানাচ্ছেন তখন আমাদের দেশের অতিবড় দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী উড়োজাহাজে উড়ে গিয়ে মাথায় ফুল গোঁজা সুকি-কে সন্ত্রাস দমনে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে দিয়ে এলেন । বন্ধু অবাক হওয়ার কিছু নেই , মোদিজী যখন ২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর ছিলেন তখন সেখানে একচেটিয়াভাবে এই রকম মুসলিম নিধন যজ্ঞ চলেছিল , এখানে চিত্রনাট্য একই শুধু মঞ্চ ভিন্ন । আমরা ভুলিনি তখনকার মুখ্যত্রমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ্য করে বলা তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীজীর ' রাজ ধর্ম ' পালনের কথা । আমরা  দেখেছি ইরাকের কুর্দিদের বাঁচানোর জন্য কিম্বা সাদ্দাম হোসেন পরমাণু বোমা বানাচ্ছে এই অজুহাতে আমেরিকার নেতৃত্বে ৩২টি  দেশের বহুজাতিক বাহিনী ১৯৯১ সালের ১৭ই জানুয়ারী বুনো ষাঁড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ইরাকে বিমান হামলা শুরু করে , কখনও আবার জঙ্গি নির্মূল করতে তারা আফগানিস্তানে টন টন বোমাবর্ষণ করে , কখনও আবার সিরিয়ায়  রাসায়নিক অস্ত্র খুঁজতে নেমে পড়ে , লিবিয়ায় বিমান হামলা চালায় এবং মাটির নিচের টানেল থেকে রাষ্ট্রপ্রধান গদ্দাফিকে টেনে বার করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং সেইসঙ্গে মুসলিম বিশ্বের ১০ লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে , তিউনেশিয়া - ইয়েমেনের গণতন্ত্র ও আরববসন্তের সুগন্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে , মিশরে ও তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানে মদত যোগায় , ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করে । কিন্তু তারা একেবারে বোবা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাচ্ছেন যখন উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা করছে, পরমাণু বোমা ফাটাচ্ছে , হাইড্রোজেন বোমা ফাটাচ্ছে, আমেরিকাকে হুমকি দিচ্ছে কিম্বা শান্তির দুত নোবেলজয়ী গণতন্ত্রী মায়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান আং সান সু কি মুসলিম নিধন যজ্ঞ চালাচ্ছেন । ধন্যবাদ মানবপ্রেমী সাহসী তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান , জয়যুক্ত হোক মানুষের বাঁচার লড়াই । তাই সময়ের দাবি ঐরূপ জলহস্তী ( আগের লেখা প্রসঙ্গে ) আর কেড়ে নেওয়া হোক সুকির নোবেল শান্তি পুরস্কার ,  আর আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা হোক মায়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ( প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য ) তথা বিদেশমন্ত্রী আং সান সুকি এবং সেনাপ্রধান মিন আং হ্লেইং এর । জয় হোক হজরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর শান্তির , সাম্যের বাণী ।


ভালো লাগলে কমেন্ট করুন । অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন । আরো আপডেট পেতে আমার ব্লগ কে সাবস্ক্রাইব  করুন ।  টুইটারে আমাকে  ফলো  করুন  ।

Comments

Popular posts from this blog

Solution To Rohingya Crisis

ANTI-MUSLIM RIOTS, AN ON GOING PROCESS OF COMMUNAL INDIA TO FACE

What's Modi's Thinking and Reality ?