Are We Approaching Towards The Final World War?

পৃথিবী কি তৃতীয় নয়, সর্বশেষ বিশ্ব যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে?


ইরানের প্রসঙ্গ উঠলে পারস্যের সঙ্গে  গ্রিসের ম্যারাথন যুদ্ধের কথা মনে পড়ে যায়। প্রাচীন সমরপটু দুর্ধর্ষ পারসিকরা গ্রিক বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুদ্ধে জয়লাভ করত এবং তারা সুশাসকও ছিলেন। কিন্তু সেবার 490 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ম্যারাথন যুদ্ধে পারসিকরা গ্রিসের কাছে হেরে গেল। আর সেই যুদ্ধ জয়ের সংবাদ ফিডিপাইডেস (Phidippides) নামক গ্রিক সৈনিক প্রায় 25 মাইল দৌড়ে গিয়ে উদ্বিগ্ন এথেন্সবাসীর কাছে পৌঁছে দেন এবং এই সংবাদ দেওয়ার পর সেখানে হাঁটুগেড়ে বসে পড়েন আর সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করেন ।আর অপরপক্ষে আমেরিকার কথা উঠলে মনে পড়ে যায় জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে 1783 খ্রীষ্টাব্দের আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা। একটা পরাধীন জাতি প্রচন্ড লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেদিন প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের হঠিয়ে দিয়েছিল। জর্জ ওয়াশিংটনের ঠান্ডা মস্তিষ্ক ও প্রখর বাস্তব বুদ্ধির জন্য সেদিন ইংরেজ সেনাপতি বারগোয়েন পরাস্ত হয়েছিলেন। তার পরবর্তী আমেরিকার ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। আমেরিকা সমগ্র বিশ্বের জ্ঞানীগুণী, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদের আশ্রয় দিয়ে নিজেদেরকে আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেট প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, চিকিৎসা শাস্ত্র, সমরশক্তি প্রভৃতি বিষয়ে সমগ্র বিশ্বে অন্যতম প্রধান শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদারে পরিণত হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের চেষ্টায় বর্ণবৈষম্য দূর হল এবং তিনি 1863 খ্রীষ্টাব্দে নিষ্ঠুর 'দাসপ্রথা' উচ্ছেদ করলেন। আব্রাহাম লিঙ্কনের DEMOCRACY অর্থাৎ, গণতন্ত্র সম্পর্কে বিখ্যাত উক্তি,"Government of the people, by the people, for the people"  অর্থাৎ "জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার এবং জনগণের জন্য সরকার" বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 1919 খ্রীষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অপর এক মার্কিন রাষ্ট্রপতি থিওডর রুজভেল্ট প্রচেষ্টায় বিশ্বব্যাপী আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশ লাভ ঘটলো। আমেরিকা যুদ্ধোত্তর বিশ্বকে অর্থনৈতিক ও অন্যান্যভাবে সাহায্য দিতে থাকল, ইউনিসেফ (UNICEF) ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে অঢেল আর্থিক অনুদান দিল। কিন্তু এহেন আমেরিকা আগ্রাসী লোভ আর ক্ষমতার দম্ভে ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকলো।সেদিন ব্রিটিশ যেমন সমগ্র বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল, ঠিক তেমনি ভাবে বর্তমানে আমেরিকাও সমগ্র বিশ্বে তাদের আধিপত্য এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করল। আর সেই সঙ্গে নানা অজুহাত ও ছলচাতুরিতে কখনো ভিয়েতনামে, কখনো তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া ও অন্যত্র পৈশাচিক মনুষ্য নিধন যজ্ঞ চালালো এবং গত 3 জানুয়ারি, ২০২০ শুক্রবার ভোরে বর্তমান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের নির্দেশে ইরাক সফররত ইরানের শীর্ষ সেনাকর্তা কুদস জেনারেল কাসেম সুলাইমানিকে মার্কিন বাহিনী ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ চুক্তিকে সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিকটে হত্যা করেছে এবং সেইসাথে ইরাকের এক পদাধিকারী সামরিক কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। এদিকে আবার ইরানও বদলা স্বরূপ সেদেশের প্রখ্যাত এক মসজিদে যুদ্ধের জন্য লাল নিশান উড়িয়ে দিয়েছে এবং ইরাকের আলআনবার প্রদেশে অবস্থিত দুটি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালিয়ে কমপক্ষে 80 জন মার্কিন সেনাকে খতম করেছে এবং বেশকিছু আহত মার্কিন সেনা ইসরাইলের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তাছাড়া ইরান মার্কিন সেনাঘাঁটির রাডার  ধ্বংসের স্যাটেলাইট চিত্রও প্রকাশ করেছে। আরও কঠোরতম প্রত্যাঘাতের হুমকিসহ জনপ্রিয় শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সুলাইমানির হত্যার বদলা স্বরূপ ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের মাথার দাম আট কোটি ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় 860 কোটি টাকা, ঘোষণা করেছে। এদিকে আবার আমেরিকা পাল্টা হুমকি দিলেও ইরানের সঙ্গে শর্ত ছাড়াই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। লক্ষ্যণীয়, ইরাক কিন্তু তাদের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ করিয়েছেন যে, সেখান থেকে সমস্ত বিদেশী সৈনিকদের হঠে যেতে হবে। আর এই "মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হঠাও" আওয়াজ যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংক্রামিত হয়, তবে তাতে আমেরিকার কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য। এর কারণ অতীতে যেমন ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র বিশ্ব উত্তাল হয়েছিল এবং ব্রিটেন তা সামাল দিতে পারে নি, তেমনি বর্তমানে আমেরিকার পক্ষেও তা অনুরূপ দুঃসাধ্য হতে পারে। তাছাড়া সূদূর অতীতে দেখা গেছে একটা খোঁড়া মসার দ্বারা আল্লাহপাক অত্যাচারী নমরুদ বাদশাহকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং জালেম বাদশাহ ফেরাউনকে নীলনদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। আমরা কিন্তু কেহই আন্তরিকভাবে যুদ্ধ চাই না, শান্তিই চাই। তবে বিধির বিধান তো অলঙ্ঘনীয়। ওদিকে আবার আমেরিকার হলিউড সিনেমা জগতের নক্ষত্ররা বলছেন "আমরা ট্র্যাম্পের হয়ে ক্ষমা চাইছি,আমরা বাঁচতে চাই।" আবার ওদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহিল খামেইয়নি বলছেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় জেনারেল কাসেম সুলাইমানির সর্বদা শহিদের মৃত্যু কামনা করতেন। সুতরাং একদিকে বেঁচে থাকবার তীব্র আকাঙ্খা আর অন্যদিকে শাহাদাত বরণ করার সুতীব্র বাসনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অতএব যুদ্ধের ফলাফল অনুমান করা গেলেও, আপাতত তা ভবিষ্যতের গর্ভেই নিহিত রইল, শক্তির ভারসাম্য নাই বা থাকুক।।




Comments

Popular posts from this blog

Solution To Rohingya Crisis

ANTI-MUSLIM RIOTS, AN ON GOING PROCESS OF COMMUNAL INDIA TO FACE

What's Modi's Thinking and Reality ?