Jammu-Kashmir and Article 370

জম্মু ও কাশ্মীর এবং ৩৭০ ধারা 


গত ৫ই আগস্ট সোমবার কাশ্মীরের মানুষের বিশেষ মর্যাদা দানকারি ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সরাসরি বিরোধিতা করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও ডি এম কে শিবির ।অপরপক্ষে TMC-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সরাসরি ৩৭০ ধারা বাতিল এবং কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অনচল লাদাখ এবং কাশ্মীর করার পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করেছে ।অর্থাৎ পক্ষান্তরে তারাও এই ৩৭০ ধারা বাতিলকে সমর্থন করছেন ।এমনকি জাতীয় কংগ্রেসের একটা অংশ এই ৩৭০ ধারা বাতিলকে বিরোধীতা করতে কুন্ঠাবোধ করছেন। তবে সমালোচনার অবকাশ থাকলেও একথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে পূর্বে জাতীয় কংগ্রেসের শাসনামলে ভারতে জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সাধারণ মানুষের বিভিন্ন দাবি - দাওয়া ও অধিকার সংক্রান্ত পরিভাষাগুলো পাঠ্যপুস্তক, পত্র পত্রিকা, খবরের কাগজ ও অন্যান্য মিডিয়াতে প্রতিফলিত হতো এবং এইসবের চর্চা বা অনুশীলন চলতো। সেদিন ভারতের মূল সুর ছিল, ' Unity in diversity' অর্থাৎ বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ।আর আজ হিন্দুত্ববাদী RSS নিয়ন্ত্রিত নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত এন ডি এ তথা BJP সরকারের ভারতে, 'বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য নয়', সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিরোধী দলের মতামত উপেক্ষা করে সংখ্যালঘু ও দলিত শ্রেণীর মানুষকে ভীত -সন্ত্রস্ত করে এক জাতি এক আইন, 'অভিন্ন দেওয়ানী বিধি' চাপিয়ে দেওয়ার প্রবনতা। Right is might অর্থাৎ 'ন্যায় ই শক্তি' নয়, 'Might is right' অর্থাৎ 'শক্তি ই' ন্যায় বলে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যার অর্থ জোর যার মুলুক তার। গায়ের জোরে গনতন্ত্রের টুটি টিপে ধরা হচ্ছে, গনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। সেইসাথে উদারমনা যুক্তিবাদী কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের হেনস্থা করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, জেলে ভরা হচ্ছে। বিরোধী মত পোষণকারীদের দমন করার জন্য কঠোর আইন পাশ করানো হয়েছে, দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে যে কোন মানুষকে যখন তখন গ্রেফতার করা যাবে। শুধু তাই নয় তাদের সমর্থনকারী এমনকি তাদের উকিলদের পর্যন্ত জেলে ভরা যাবে। তবে ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় 'গিলেটিন যন্ত্রের' আবিস্কার কর্তার শেষ পরিণতির কথা। খুন, ধর্ষন, দলিত ও সংখ্যালঘু বিদ্বেষী লাগামহীন কথা বার্তা, গোরক্ষার নামে সংখ্যালঘু মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা, মব লিংচিন, মুসলিমদের জোর করে হিন্দুত্ববাদী শ্লোগান 'জয় শ্রীরাম' বলানো, 'তিন তালাক বিল' পাশ করিয়ে মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায হস্তক্ষেপ করা , দরিদ্র মুসলিম ও দলিতদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য পশুর কাঁচা চামড়ার দাম সুকৌশলে কমিয়ে দেওয়া, নোট বাতিল ও জি এস টি - র ম্যাজিক দেখিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ধ্বংস করা, দেনার দায়ে অভাবী চাষিদের আত্মহত্যায বাধ্য হ ওয়া প্রভৃতি অপকর্ম ঢাকতে হিন্দু সেন্টিমেন্ট লাভ করতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্য অন্যদিকে ঘোরাতে নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহরা কাশ্মীর তাস খেলে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল করলো অথচ ঐ ধারার মতো অনুরূপ সুবিধা ভারতের অপর কয়েকটি অংগ রাজ্য নাগাল্যান্ড, মনিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমবাসীরা পেয়ে থাকেন। মনেরাখতে হবে কাশ্মীর BJP-র কাছে একটা ইস্যু মাত্র। তাদের আসল উদ্দেশ্য এক এক করে RSS -এর এজেন্ডা সম্পূর্ণ করা। ভারতকে ধাপে ধাপে মুসলিম শূন্য হিন্দুরাষ্টে পরিনত করা। আর হিন্দুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য আগামী সংসদ অধিবেশনে 'ধর্মান্তরন' বিল আনার তোড়জোড় চলছে। উদ্দেশ্য অত্যাচারীত দলিত ও নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা যাতে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ খ্রিস্টান জৈন বা মুসলমান হতে না পারে। আর সনাতন হিন্দু ধর্মের নামে স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকের গৈরীকরনের কাজ তো ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া BJP তো প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বদ্ধপরিকর মুঘল সম্রাট বাবরের স্মৃতি বিজডিত ধ্বংস করা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থলে 'রাম মন্দির' নির্মাণ করা। যদিও শীর্ষ আদালত ( Indian Supreme Court) বাধ সেজেছে বাবরি মসজিদের স্থলে আগে রামমন্দির ছিল। উল্লেখ্য মুসলিমদের মসজিদ নির্মাণে অমুসলিমদের নিকট থেকে কোনো স্বেচ্ছা দান পর্যন্ত নেওয়া যায় না, তা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম বা অবৈধ কাজ। এই যেখানে বাস্তবতা সেখানে হিন্দু ভাইদের রামমন্দির ভেঙে সেখানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে এই গল্পের কোনো প্রশ্ন ই থাকতে পারে না। এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হলো জাতীয় সংহতির স্থানে যদি 'হিন্দু সংহতি' - র নামে যদি একের পর এক সংখ্যালঘু মুসলিমদের জান মাল ও ধর্মে হস্তক্ষেপ হতে থাকে, তিন তালাক দেয়া ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত মুসলিম জেল কয়েদিকে যদি জেলের ভিতরে অবস্থান করে তালাক প্রাপ্ত ( Divorcee) স্ত্রীকে খোরপোশের অর্থাৎ ভরনপোষন নিমিত্ত ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হয়, কাজ না পাওয়া হতভাগ্য বেকার যুবক যুবতীদের যদি ইন্টারনেটের ডেটার ভরসাতে মূল্য বান জীবনটাকে কাটিয়ে দিতে হয়, গরিব মানুষ ব্যাংক লোন পায় না আর কোটিপতি কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা পুঁজিপতিরা কোটি কোটি টাকা ব্যাংক লোন নিলে তাদের বিদেশ পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে তো দেশপ্রেম জানালা দিয়ে পালিয়ে যাবে গো।


কাশ্মীর সমস্যার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও 370 ধারা খারিজ প্রসঙ্গে : সপ্তম শতাব্দীর আগের থেকেই ভারতের সাথে আরব দেশের বনিকদের ব্যবসা বাণিজ্য চলতো বিশেষত জলপথে তবে সেবার সিন্ধু এলাকার জলদস্যুরা আরবের এক বানিজ্যতরি লুঠ এবং মহিলাদের অপহরণ ও সম্মানহানি করলে বাদশাহ হজ্জাজ সিন্ধু প্রদেশের রাজা দাহিরের প্রতিকার চেয়ে বিফল হলে 712 খ্রিস্টাব্দে তার সেনাপতি মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু অভিযান করে দাহিরকে পরাজিত ও নিহত করে সর্ব প্রথম ভারতে মুসলিম বিজয় সূচনা করেন। পরবর্তীকালে পাঠান সুলতান ও মুঘল বাদশাহরা ১৮৫৭সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় পর্যন্ত এদেশ শাসন করেন। মুঘল বাদশাহ আওরংজেবের দেশের সীমানা সর্বোচ্চ হয়েছিল। তারপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ষড়যন্ত্র করে ভারত দখল করলো। পরবর্তী ইতিহাস সকলে জানেন কিম্বা ভুল যেতে পারেন। প্রকৃত ঘটনা হলো হিন্দু মুসলমানদের মিলিত লড়াই ও সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। উল্লেখ্য অবিভক্ত ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য মুহম্মদ আলি জিন্নাহ -র 14 দফা দাবি জ ওহরলাল নেহরু মেনে না নেওয়ায় কুচক্রি ব্রিটিশের Devide and Rule পলিসির সৌজন্যে 1947 খ্রীষ্টাব্দের 15 আগস্ট আমরা খন্ডিত স্বাধীনতা লাভ করি এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র জন্ম গ্রহণ করে। তবে 1947 খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' পাশ হয় । দেখা গেল সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, প শ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়।

এদিকে স্বাধীনতা লাভের আগেই গান্ধীজী ও জ ওহরলাল নেহরু জানিয়ে দেন যে, ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করা হবে না ।সেইহেতু 1947 খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর' (State Department) গঠন করে 'লৌহ মানব' নামে পরিচিত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে এই দফতরের দায়িত্ব দেয়। প্যাটেলের কঠোর মনোভাব, ও সামরিক অভিযান চালানোর উদ্যোগ স্বরাষ্ট্রসচিব ভি পি মেননের কূটকৌশল ও লর্ড মাউন্ট ব্যাটনের সহযোগিতায় দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করা সহজ হয়ে ওঠে। দেশীয় রাজ্যগুলিতে প্রজাবিদরোহের আশঙ্কাসহ নানা কারণে স্বাধীনতা লাভের মাত্র 3 সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে 'ভারত ভুক্তির দলিল' বা Instrumet of Accessionএ স্বাক্ষর করিয়ে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তবে জুনাগড, কাশ্মীর ও হায়দরাবাদ ভারতে যোগদানে অস্বীকার করে। মনে রাখা দরকার যে 80%হিন্দু অধ্যুষিত জুনাগডের মুসলিম নবাব মহম্মদ মোবারক খন্জী(3 rd) পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে যোগ দিতে চাইলে হিন্দু প্রজারা প্রবল গন আন্দোলন শুরু করে এবং ভারতীয় সেনা অশান্ত জুনাগডে প্রবেশ করলে নবাব পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। অবশেষে 1948 খ্রীষ্টাব্দে 20 ফেব্রুয়ারি 'গনভোটে' র মাধ্যমে জুনাগডের জনগন ভারতভুক্তির পক্ষে অভিমত প্রকাশ করলে 1949 খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রাজ্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভুক্ত হয়। উল্লেখ্য 1947 খ্রীষ্টাব্দে বৃটিশরা ভারত ছাড়ার সময় এদেশে সরকারিভাবে ছোটো বড়ো 601 টির বেশি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যটি ছিল হায়দরাবাদ। যার আয়তন ছিল 82000 বর্গ মাইল এবং নিজাম বা শাসক ছিলেন ধর্মে মুসলিম কিন্তু রাজ্যের 80%এর অধিক জনগন ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। নিজাম ওসমান আলি খান একটা ফরমান (Order) দ্বারা হায়দরাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষা করার কথা ঘোষণা করেন। আজকের তেলেংগনা, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে ওঠা রাজ্যটি রেল ও সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে যোগাযোগকারি রাজটি দখল করার জন্য ভারত নিজামকে কয়েকটি দাবি সম্বলিত একটি চরম পত্র পাঠায় এবং তা উপেক্ষিত হলে ভারত 1948 খ্রিস্টাব্দের 13 সেপ্টেম্বর জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে সামরিক অভিযান চালিয়ে 18 সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদকে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে।


পাক-ভারতের কাশ্মীর প্রাপ্তি ও চলমান দ্বন্দ্বের কিছু সমাধান ভাবনা : 1947এ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষিত 'ভারতের স্বাধীনতা আইনে' বলা হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত যে ভারতীয় প্রদেশ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ তা ভারতে আর যে প্রদেশগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তা সরাসরি পাকিস্তানে যাবে। তবে বৃটিশের করদরাজ্য প্রিন্সলি স্টেটগুলো তাদের ইচ্ছা মতো ভারতে বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু জুনাগড, হায়দরাবাদ ও জম্মু - কাশ্মীর নিয়ে রক্তক্ষযী সংঘর্ষ হয়।কাশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জটিল অবস্থা তৈরী হয়। ভারত, পাকিস্তান, চিন ও রাশিয়ার সীমান্ত দিয়ে ঘেরা কাশ্মীরের আয়তন ছিল 84471 বর্গ মাইল। কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা মুসলিম হলে ও মহারাজা হরি সিংহ ছিলেন পাঞ্জাবী হিন্দু। তিনি 1931সালে সিংহাসনে বসেন। উল্লেখ্য 1947 খ্রীষ্টাব্দের ডেমোগেরাফিতে দেখা যায় পুরো জম্মু - কাশ্মীরের কাশ্মীর উপত্যকা অংশে হিন্দু জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে আর জম্মু অংশেও 30%এর বেশী হিন্দু জনগোষ্ঠী নেই। তবে ঘটনা হলো ভারত বিভক্ত হলে হিন্দু রাজা হরি সিংহ তার ডোগরা বাহিনী দিয়ে দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে দাঙ্গা খুন ধর্ষণের মাধ্যমে জম্মু অংশকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অনচলে পরিনত করেন। আর এর প্রত্যুত্তরে জম্মু লাগোয়া পাকিস্তান অংশ থেকে উপজাতি মুসলিমরা হানা চালায়। তাই দেখা যায় পাক অধিকিরিত আজাদ কাশ্মীর পূর্বতন জম্মুর ই অংশ। উল্লেখ্য কাশ্মীরের দুর্ভাগ্য যে, এটি Priencely State না হয়ে যদি সরাসরি কোম্পানির অধিনস্ত কোনও প্রদেশ হতো তবে মুসলিম প্রধান এলাকা হিসেবে কাশ্মীর সরাসরি পাকিস্তানের অংশ হয়ে যেত।

আর আমরা ভাগ্যবান কারণ আমরা কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিংহের আবেদনের বদান্যতায কাশ্মীরের উপর প্রবল অধিকার দাবি করতে সমর্থ হয়েছি। স্বাধীনতা লাভের পরে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মীরকে নিজেদের রাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তবে প্রথমে কাশ্মীরের স্বাধীনতা হরি সিংহ আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু 1947 খ্রীষ্টাব্দের 22 অক্টোবর পাকিস্তানের মদতপুষ্ট উপজাতীয হানাদার বাহিনী জম্মু কাশ্মীরের শ্রীনগর পর্য্যন্ত প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। তখন রাজা হরি সিংহ 24 অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী মেহের চাদ মহাজনের মাধ্যমে ভারতের সাহায্য চেয়ে পাঠান এবং কাশ্মীরের রাজা হরি সিংহ 26 অক্টোবর কাশ্মীরের ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন। অ্যাকসেশন চুক্তি অনুযায়ী হরি সিংহ ভারতকে কেবল বৈদেশিক পররাষ্ট্র, সামরিক এবং বাইরের সংগে যোগাযোগের মতো বিষয়গুলি হস্তান্তর করেছেন। যার অর্থ কাশ্মীর ভারত রাষ্ট্রের ভূখন্ড নয় বা ভারতের আইন ও কনস্টিটিউশনের অধীন নয় আর এইসব কথাগুলো ভারতীয় সংবিধানের যে অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সেটাই 370 ধারা। এই ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরিদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরের 370 ধারা যেহেতু কাশ্মীর বিধানসভার অনুমোদন ছাড়া সংশোধন করা যায় না সেইহেতু 2018 সালের একটা রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন কাশ্মীরের 370 ধারা একটা স্থায়ী বন্দোবস্ত। এই চুক্তিতে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে স্বাযত্ব শাসনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যাহোক কাশ্মীরের ভারতভুক্তিতে কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ - র পিতা সেখ আব্দুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। প্রখ্যাত পিস অ্যাক্টিভিস্ট বা শান্তি কর্মী ও পি শাহ যিনি সেন্টার ফর পিস এ্যান্ড অ্যান্ড প্রোগেরেস সংস্থার চেয়ারম্যান , কাশ্মীরের 370 ধারা বাতিল প্রসঙ্গে খুবই সহজ সরল ভাষায় মন্তব্য করেছেন এই বলে যে, 'এ তো হল যেন আগের সরকারের আমলে পাওয়া সরকারি চাকরি বর্তমান সরকার এসে খারিজ করে দিল।' তিনি জানান 370 ধারা বাতিল করার আগে কাশ্মীরবাসীর সংগে আলোচনা করা উচিত ছিল।

কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া 35এ এবং 570 ধারা বাতিল মানে চুক্তি লংঘন ,সংক্ষেপে তীব্র অশনি সংকেত :সুসভ্য সমাজের একটা বিশেষত্ব হলো সম্পাদিত সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় মান্যতা বজায় রাখা আর এর ব্যতিক্রম ঘটানোর অর্থ বিপর্যয় ঢেকে আনা এবং অজানা ভয় ও আশংকার পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা। 370 ধারা প্রত্যাহারের কড়া নিন্দা করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। নিউইয়র্ক টাইমস এটাকে বিপজ্জনক ও ভুল সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছে। দ্য গারডিযান ( The Guardian) পত্রিকাতে সমালোচনা করে বলা হয়েছে 370 ধারা তুলে দেওয়ার মধ্যে বিজেপির গেরুযা রাজনীতি আরও একবার মুখ দেখল।পত্রিকাটি বলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পদক্ষেপ আইনানুগ নয়। জার্মান গণমাধ্যম ডি ডব্লিউ তাদের হেডলাইনে লিখেছে 'সরকার আগুন নিয়ে খেলছে। এরফলে কাশ্মীরের শাস্তি আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। আল জাজিরা লিখেছে দিনটি অন্ধকারময। দ্য ডন বলেছে. এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বল প্রয়োগ করে। দ্য নিউজ বলেছে, এই ঘটনায় কাশ্মীরে অন্ধকার যুগের সূচনা হল। সেখানকার মুসলিম জনবিন্যাসে এর প্রভাব পড়বে।

এই আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে (৫আগস্ট,২০১৯) বর্তমান ভারতের নরেন্দ্র মোদীর BJP সরকার মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু - কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে। ফলে দেশে বিদেশে নিন্দা প্রতিবাদ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টির উপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী ট্যূইট বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন, 'সংবিধানকে লংঘন করে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলে পুরে ও জম্মু - কাশ্মীরকে দ্বিখন্ডিত করে জাতীয় সংবিধানকে শক্তিশালী করা যায় না। শুধুই কিছু জমির খন্ড দেশটাকে গড়ে তোলেনি, দেশটাকে গড়ে তুলেছেন দেশের নাগরিকরাই। প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।

গত 7 আগস্ট লোকসভায় বিরোধী দলনেতা জাতীয় কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সংগে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং জানান, নিয়ম ভেঙে জম্মু - কাশ্মীর ভাগ করা হচ্ছে। শিমলা চুক্তি ও লাহোর চুক্তি সত্বেও এই আভ্যন্তরীণ চুক্তি কীভাবে হল? ওই দুই চুক্তিই ছিল দ্বিপাক্ষিক বিষয়ক। আর এখন জম্মু - কাশ্মীরকে কযেদখানা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য জম্মু - কাশ্মীরের 370 ধারার উপর লোকসভায় ভোটাভুটিতে TMC দল অংশ গ্রহণ করে নি । TMC -র সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান এর কারণ বিষয়টি নিয়ে সেখানকার মানুষজনের সংগে আলোচনা করা হয় নি। তাছাড়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গ্রেফতার করা ঠিক হয় নি। এদিকে আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় দাড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী জম্মু - কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাক অধিকারভুক্ত কাশ্মীর ও আকসাই চিন ও ভারতের অংশ। 


জম্মু - কাশ্মীরের 370 ধারা এবং 35-এ ধারা রদে দেশ বিদেশের প্রতিক্রিয়া, আলোচনা ও সমালোচনা : একদা দেশের মধ্যে IAS পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকারী তরুণ আমলা শাহ ফায়শল যিনি সম্প্রতি চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি জম্মু - কাশ্মীরের 370 ধারা রদকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। ওদিকে এই 370 ধারা বাতিলকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন কাশ্মীর একটি আন্তর্জাতিক বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর বিষয় যার উল্লেখ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্ল্যুশনেও আছে। তাই ভারত একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন নেতাদের সংগে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু দেশ কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থানের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের জনপ্রিয় নেতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয্যেপ এরদোগান এবং মালয়েশিয়ার প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী ড: মাহথির মুহাম্মদ কাশ্মীর প্রসঙ্গে ইমরানের সংগে সহমত পোষণ করেছেন। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেন কাশ্মীরিদের আত্মনিযন্তরনের অধিকারের প্রতি পাকিস্তানের কুটনৈতিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন সর্বদা জারি থাকবে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ কুরেশি রাষ্ট্র সংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টনিও গূতারেসকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, কাশ্মীরের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে ভারত সরকার সেখানে ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে। কাশ্মীরের স্বশাসন ও বিশেষত বিশেষ মর্যাদা আইন বাতিল রাষ্ট্র সংঘেরনীতিমালা লংঘন করেছ। (চলছে) অন্যদিকে, আমেরিকাও কাশ্মীর পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে তবে কাশ্মীরকে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটন এবং যুযূধান উভয় দেশকে শান্তি বজায় রেখে সংযম পালনের পরামর্শ দিয়েছে। তাছাড়া রাষ্ট্রসংঘ উভয় দেশকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তবে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পথে নেমে কাশ্মীর নিয়ে বিক্ষোভ দেখান শুরু করেছে। এদিকে আবার ভারতের একঝাক প্রাক্তন সেনা অফিসার ও সরকারি আমলা 370 ধারা এবং আর্টিকেল 35এ রদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজু করেছেন। আবেদনকারীদের একজন রাধাকুমার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জম্মু - কাশ্মীরের দায়িত্বে থাকা আলোচনাকারী গোষ্ঠীর প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। অপর এক আবেদনকারী হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব তথা কেরল ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত IAS অফিসার গোপাল পিল্লার। বাকি আবেদনকারীরা হলেন জম্মু - কাশ্মীর ক্যাডারের প্রাক্তন IAS অফিসার হিন্দল হায়দার তৈযবজি, প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল কপিল কক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক কুমার মেহতা এবং পাঞ্জাব ক্যাডারের প্রাক্তন IAS অফিসার অমিতাভ পান্ডে।. কাশ্মীরে মানবাধিকার পুরোপুরিই লংঘিত আর এর প্রতিবাদে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 19. আগস্ট সোমবার আর্ন্তজাতিক মানবিকতা দিবসে ট্যুইট পাঠিয়েছেন এই মর্মে যে, 'আজ বিশ্ব মানবিকতা দিবস। কাশ্মীরের মানুষদের অধিকার পুরোপুরি লংঘন করা হচ্ছে। সবাই আমরা যেন কাশ্মীরের মানবাধিকার ও শান্তির জন্য প্রার্থনা করি।' এদিকে আবার কেন্দ্রের BJP সরকারের কাশ্মীর বিষয়ক পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে 85 বছর বয়সী নোবেলজযী অর্থনীতিবিদ ড: অমর্ত্য সেন NDTV-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন' এটা শুধু যে সংখ্যাগুরু শাসনের ওপর ই গুরুত্ব দিয়েছে তা নয়, বরং এর দ্বারা সকল মানুষের অধিকারকেই পদদলিত করা হয়েছে। আমি মনেকরি আপনারা শেষ পর্যন্ত গনতন্ত্র ব্যতীত কাশ্মীর সমস্যার কোনও সমাধান করতে পারবেন না।'অমর্ত্য সেন আরও বলেছেন, 'একজন ভারতীয় হিসাবে আমি এখন আর গর্ব বোধ করতে পারছি না, কারন ভারত সারা বিশ্বে গনতান্ত্রিক নিয়ম প্রতিষ্ঠার জন্য বহু কিছু করেছে। আর ভারত হল পাশ্চাত্যের বাইরে প্রথম দেশ যে গনতন্ত্রকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমরা আজ বাস্তবের ময়দানে যে আচরণ করছি, তাতে আমরা সেই মর্যাদা হারিয়েছি। 'তাছাড়া এখন কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের মানুষদের জমি কেনার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সে সম্পর্কে ড. সেন বলেন,' এই বিষয়ে কাশ্মীরের মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। তাছাড়া এটা আরও একটা বিষয় যাতে কাশ্মীরিদের আইনসংগত মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে কারণ এটা তাদের-ই জমি।' এই সাথে তিনি কাশ্মীরের মূল ধারার রাজনীতিবিদদের বন্দি করে রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।

ইতিপূর্বে কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হয়েছে, সমগ্র কাশ্মীরকে কঠোর নিরাপত্তা বলযে মুডে ফেলে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে কাশ্মীরে মৌলিক অধিকার ভুলুন্ঠিত করানোর প্রতিবাদে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন IAS কান্নান গোপীনাথন। সেখানে ইন্টারনেট, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ। কাশ্মীরের অবস্থা সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, জারি রয়েছে প্রশাসনিক বিধি নিষেধ, কয়েকসপ্তাহ ধরে মানুষ স্বাধীনভাবে নিজের কাজ করতে পারছে না, রাস্তায় বেরোতে পারছে না এমনকি প্রধান প্রধান মসজিদগুলিতে মানুষ জুম্মার নামাজ পড়তে পারছেন না, যদিও ছোট মসজিদগুলিতে শর্তসাপেক্ষে আধার কার্ড বা অন্য উপযুক্ত পরিচয় পত্রের মাধ্যমে অনুমতি মিলছে। অফিস - আদালত, স্কুল - কলেজ ধুকছে, হাসপাতাল ও দোকানে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে, স্বাভাবিক কাজকর্ম ও খাদ্য - কেনাকাটার মতো জরুরী পরিষেবাগুলির অবস্থা অনুমেয, ডাইনে- বামে, সামনে - পিছনে সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উগ্র উপস্থিতি, সেনা-জ ওযানদের মুকাপেক্ষী হয়ে সর্বক্ষণ চলতে হচ্ছে উপত্যকাবাসীদের। ফলে লংঘিত হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার।এহেন পরিস্থিতিতে এভাবে একটা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের যাবতীয় কাগজ পত্র জমা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে IAS অফিসার কান্নান গোপীনাথন বলেন, 'জম্মু - কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয়। একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনি এটা মেনে নিতে পারছেন না। সেই ক্ষোভ থেকে ও বিবেকের তাড়ানায চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন চাকরি ছাডলেই যে কাশ্মীরের পরিস্থিতি বদলে যাবে তা নয়। তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না , প্রতিবাদ তো করতেই হবে। '. উল্লেখ্য এর আগে কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক কড়া-কডিকে কটাক্ষ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির কন্যা ইলতিজা জাভেদ কাশ্মীরকে উম্মুক্ত জেল খানার সংগে তুলনা করে ছিলেন। বিগত 19 আগস্ট সোমবার কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে বন্দি মুক্তি কমিটির এক কনভেনশনে অধ্যাপক সুখেন্দু সরকার বলেন, যেখানে কাশ্মীর গোটা ভারত ও বিশ্বের সংগে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন, তারপরও প্রধান মন্ত্রী বলেছন কাশ্মীরে উন্নয়নের বন্যা বহিযে দেবেন , । এটা সবচেয়ে বডো প্রতারণা। তিনি আরও বলেন যে, কাশ্মীরের সংগে ভারত - ভূক্তির শর্ত হিসাবেই 370 ধারা বা 35-এ ধারার সংস্থান। একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত সাত দশকে কাশ্মীরে প্রায় 96000 মানুষ নিহত হয়েছে, যা ইরাক যুদ্ধে নিহতের চেয়ে বেশি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন সরকার নিজের দেশের মানুষকেই মারছে কেন? তিনি ফ্যাসিবাদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান। অন্যদিকে, মানবাধিকার কর্মী অধ্যাপক সুজাত ভদ্র কাশ্মীর ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপকে ইতিহাসের প্রবনচনা, মিথ্যাচার ও দ্বিচারিতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন জুনাগডে গনভোট নেওয়া হলেও কাশ্মীরে কেন হল না? 


কাশ্মীরের 370 ধারা এবং 35-এ ধারা রদ ও কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে লেখাটি দীর্ঘতর করে পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থী। যাহোক বন্দি মুক্তি কমিটির কনভেনশনে কমিটির সভাপতি ছোটন দাস দাবি করেন কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য আলাপ আলোচনা দরকার এবং তিনি চান সে রাজ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ হোক। আমাদের দুর্ভাগ্য সীতারাম ইযেচুরির মত একজন জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিত্বকে কাশ্মীরে ঢুকতে গিয়ে দু-দুবার Srinagar এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে আসতে হল এবং তৃতীয়বার সুপ্রীম কোর্টে র আদেশ বলে গত বুধবার কাশ্মীরে ঢোকার ব্যাপারে অনুমোদন মিলল। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে তিনি রাহুল গাঁধী এবং অন্যান্য ন-দলীয় বিরোধী নেতাদের শ্রীনগর এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিককে তার-ই দেশের একটি অনগরাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, এর মত দু:খজনক লজ্জার ঘটনা আর কি হতে পারে। কেন্দ্রের স্বৈরাচারী BJP সরকারের সাম্প্রতিক কাশ্মীর বিষয়ক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিতে ন'দলের প্রতিবাদ সভায় CPM দলের জেনারেল সেক্রেটারি সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, অন্য রাজ্যগুলি যখন সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে তখন মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু - কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার রক্ষাকবচ সংবিধানের 370 ধারা ও 35-এ রদ করে বিমারতিরিসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। এই সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন এবং পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। মোদী সরকার চাইছে 'কাশ্মীরকে ফিলিস্তিন' বানাতে। ফিলিস্তিনের মানুষেরা যেভাবে নিজভূমে পরবাসী হয়ে রয়েছে, এখানকার মানুষদের সেই দশা করতে চাইছে। তিনি বলেন, বিজেপি-র পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, জম্মু - কাশ্মীরে বাইরের লোক জমি কিনতে পারবে না কেন? বিজেপি এই সত্য প্রচার করছে না যে, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, সিকিম, নাগাল্যান্ড,মিজোরাম,মনিপুরেও বাইরের লোক জমি কিনতে পারেন না। BJP সরকার চাইছে RSS-এর নির্দিষ্ট করা কর্মসূচি অনুযায়ী গনতান্ত্রিক ভারতকে ফ্যাসিবাদি হিন্দুরাষ্টে পরিনত করতে।' উল্লেখ্য কাশ্মীর নিয়ে এই প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দল DMK আর অন্য বিরোধী দলগুলো হল TMC, CPM, CPI, RJD, NC, ADMK ও সমাজবাদী পার্টি। এই প্রতিবাদ সভায় বিশিষ্ট জাতীয় কংগ্রেস নেতা ও জম্মু - কাশ্মীরের এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ বলেন, আমাদের ধারণা সেখানে মারাত্মক কিছু ঘটে গিয়েছে আর কেন্দ্রের মোদী সরকার তা আড়াল করতে চাইছে।' এখন এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক কাদের জন্য কাশ্মীরে জমি কেনার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে? নিশ্চয়ই বহুজাতিক সংস্থা,বড় বড় শিল্পপতি কিংবা কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের জন্য, কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে নিজের এলাকায় সামান্য একটু জমি কিনতে সাধারণ মানুষের নাভিস্বাশ ওঠে আর তারা কিনা কাশ্মীরে জমি কিনবে! অতি সম্প্রতি আমরা প্রত্যক্ষ করলাম পৃথিবীর ফুসফুস নামে খ্যাত আমাজনের জঙ্গল দাবানলে জ্বলছে, জীব-জন্তু, গাছপালা সব পুড়ে একাকার, উদ্ধারকারী বনকর্মীর কোলে চেপে হিংস্র বাঘ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। শোনা যাচ্ছে সেখানেও নাকি কর্পোরেট সংস্থার লোভী শ্যেন দৃষ্টি। আমরা দেখলাম এক্কেবারে পূর্বপরিকল্পনামাফিক ছক কষে হঠাৎ করে কাশ্মীরে অতিরিক্ত 50,000 সৈন্য পাঠানো হলো,তারপর অমরনাথ তীর্থ যাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হবে গল্প ফেদে দুম করে অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হল। এরফলে এক ঢিলে দুই কাজ হলো, প্রথমতঃ হিন্দু সেন্টিমেন্ট অর্থাৎ হিন্দুত্ব ভাবাবেগ অর্জন সহজতর হল এবং দ্বিতীয়ত কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ক্ষেপিযে তোলা গেল। অবশ্য কথাগুলো বলা হল আপেক্ষিক অর্থে কারণ দেশে অগনিত উদারমনা, মানবিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ হিন্দু ভাই - বোন আছেন। আমরা জানি যুগ যুগ ধরে আবহমানকাল ব্যাপী কাশ্মীরের কি দরিদ্র, কি মধ্যবিত্ত কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধিবাসীরাই হিন্দু তীর্থযারতিদের ঘোড়া, গাধা বা ডুলিতে চাপিয়ে অমরনাথ গুহায পৌঁছে দেন এবং নামিয়ে নিয়ে আসেন আর এটা হল তাদের জীবন-জীবিকা, অহেতুক তারা নিজেরাই নিজেদের পেটে লাথি মারতে যাবে কেন? আমরা কম বেশি কাশ্মীরি মানুষদের চিনেছি, কাশ্মীরি শাল ওয়ালাদের মাধ্যমে। ফর্সা, সুদর্শন, সদালাপি হাসিমুখ ওয়ালা কাশ্মীরি পোষাক বিক্রেতারা প্রতি বছর আমাদের পাড়ায় পাড়ায় আসেন আর এইসব ইয়াসিন লোন ভাইয়েরা নগদ বা কিস্তিতে তীব্র শীতে আমাদের আরামের জন্য গরম পোষাক তুলে দেন, কোনো দিনের জন্য আমি তাদের ঝগড়া করতে দেখেনি আর আজ আমরা তাদের চোখের ঘুম হারাম করে দিচ্ছি, পেলেট গান বা ছররা গুলিতে অন্ধ করে দিচ্ছি, ছোট্ট তিন বছরের কন্যা শিশুটিকেও ছাড়ছি না। কেন ছোট ছোট বাচ্চারা আজ হাতে বন্দুকের গুলির বিরুদ্ধে পাথর তুলে নিচ্ছে, স্কুল কলেজের মেয়েরা পথে নেমে প্রতিবাদ গর্জে উঠেছে, কত অজানা প্রতিভাবান তরুণ সেনা - পুলিশের গুলিতে মৃত্যু বরন করছে সেই হিসাব নেওয়ার সময় কী আমাদের আছে? আমরা কি একবার ও ভেবে দেখেছি মোদীর কোন ম্যাজিকে মজে, কোন আশায় বুক বেঁধে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু - কাশ্মীর রাজ্যে 2015 সালে মুফতি মেহবুবার PDP এবং নরেন্দ্র মোদীর BJP দল জোট বেঁধে সরকার গঠন করলো আবার তা অকালে ফোটা ফুলের মতো ঝরে পড়লো? ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কার ও নাম না করে বলেছেন, 'এতদিন তিনটে পরিবার কাশ্মীরের সবকিছু ভোগ করেছে।' তবে হ্যাঁ যে সত্য কথাটা তিনি বলতে ভুলে গেছেন তা হল, 'এখন পুরো ভারতটাকে ভোগ করছে তীব্র সাম্প্রদায়িক মুসলিম ও দলিত বিদ্বেষী বৃহত্তর RSS তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ পরিবার।' এখন তো দেখা যাচ্ছে কাশ্মীর নিয়ে মোদীর সরকারের' সাপের ছুচো গেলার' মতো অবস্থা। কাশ্মীর কেমন আছে, কাশ্মীরের' বাস্তব চিত্র 'তুলে ধরতে সমাজকরমীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। গত 9 থেকে 13 আগস্ট চার জন সমাজকরমী, সিপিএম নেতা কবিতা কৃষ্ণন, অর্থনীতিবিদ জেন ড্রেজ,All India Democratic Women Association সদস্যা ম ইমুনা মোল্লা ও National Alliance Of Peoples Movement এর সদস্য বিমল ভাই জম্মু - কাশ্মীরের সোপোর, বান্দিপোরা, অনন্ত নাগ , পুল ওয়া মা, পাম্পের, শ্রীনগরসহ একাধিক এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু তাদের তোলা ছবি ও ভিডিও গুলো সম্প্রচারে প্রেস ক্লাব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওদিকে সেখানকার সাধারণ মানুষের উপর সেনা অত্যাচারের কথা সংবাদ মাধ্যমে অল্প স্বল্প সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। BBC - র এক খবরে প্রকাশ সেদিন রাতে সেনা বাহিনী কম করে 15 জন কিশোর কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক অত্যাচার চালায় , প্রচন্ড প্রহার করে এবং সেন্স হারিয়ে ফেললে ইলেকট্রনিক শক দিয়ে আবার সেন্স ফিরিয়ে অত্যাচার চালানো হয় আর হুমকি দিয়েবলা হয় এসব খবর তারা যেন অন্যদের জানায় যাতে তারা আর বিক্ষোভ প্রতিবাদ করতে সাহস না পায়।1971 সালে পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে , পাকিস্তানের খান সেনা বাহিনীর অত্যাচারের কথা এবং তার ফলাফল আমাদের জানা আছে। সুতরাং স্পর্শকাতর বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? 

1999 -পাক যুদ্ধের জন্য সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা কার্গিল জেলার বেশির ভাগ মানুষই মুসলমান। আমাদের কারো কারো হয়তো স্মরণ থাকতে পারে সেদিন সেখানে পাক সেনার উপস্থিতি ভারতীয় সেনাকে সর্ব প্রথম জানিয়েছিল এক মেষ পালক দেশপ্রেমিক মুসলিম যুবক ই।যাহোক পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শেষ ভারতীয় গ্রাম লাতুরের ক্রিকেট পাগল বাসিন্দা আসগর আলির কথায় আসা যাক। সাংবাদিক জূবাযের আহমেদের কলমে প্রকাশ (সাম্প্রতিক আগস্ট 18,2019)বছর কুড়ি আগে আমার বয়স ছিল 45 বছর। ভারতীয় সৈনিকরা আহত হয়ে পড়ে থাকতো আর আমি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনতাম। গ্রামের অনেকেই আহত সৈনিকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন এবং তারপর সৈনিকদের পৌঁছে দিতেন তাদের ছাউনিতে, আমরা সেদিন আমাদের বাহিনীকে সবরকমের সাহায্য করেছিলাম, আর আজ কার্গিলের বাসিন্দাদের প্রতি সুবিচার করা হল না। লাদাখকে কাশ্মীরের থেকে বিচ্ছিন্ন করে আমাদের মূল স্রোত থেকে আলাদা করে দেওয়া হল।আমাদের দুর্ভাগ্য চারিদিকে শুধু 'জয় শ্রীরাম' হুংকার ধ্বনি,কিন্তু সেদিন আমরা কারগিল রনাংগনে দেখেছি ভারতীয় মুসলিম সেনাদের 'নারা-ই - তকবির, আল্লাহু - আকবর' ধ্বনিতে পাক সেনারা বিভ্রান্ত, দিশেহারা। এই প্রসঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। 1965 সালের ভারত -চিন যুদ্ধের সময় সংগে ছিল দোসর পাকিস্তান, আর তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হায়দরাবাদে গেলেন এবং তিনি নিজামকে অনুরোধ করলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা তহবিলে কিছু দান করতে। নিজাম মীর উসমান আলি খান সিদ্দিকী, যিনি প্রথমে হায়দরাবাদকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেই নিজাম ভারতের নিরাপত্ত তহবিলে মাত্র পাঁচ টন অর্থাৎ 5000 কিলোগ্রাম সোনা এবং নগদ 75 লক্ষ টাকা দান করলেন। অপর এক ঘটনায় দেখা যায় বিকানীরের মহারাজার অনুরোধে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের জন্য নগদ এক লক্ষ টাকা দেন। আর আজ যদি তাদের অর্থাৎ মুসলিমদের প্রতি বিজাতীয মনোভাব পোষণ করা হয় তবে বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়?

খুবই দুঃখজনক ঘটনা একদিকে কাশ্মীরবাসী নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন আর অন্য দিকে এক শ্রেণীর উচ্চ পদেআসীন মানুষ কাশ্মীরবাসীদের সম্পর্কে অত্যন্ত নিম্নরুচি পূর্ণ মন্তব্য করে চলেছেন। কাশ্মীরি মেয়েদের সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার সেটাও আবার 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও মন্চে' ।তিনি বলেন, আমার মন্ত্রী বলেছিলেন, বিহার থেকে পুত্রবধূ আনতে হবে। তবে লোক আজকাল বলছে কাশ্মীরের রাস্তা খুলেছে, এবার কাশ্মীর থেকে মেয়ে আনব আমরা। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইটারে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন,' আমরা যারা উচ্চপদে রয়েছি তাদের জম্মু - কাশ্মীরের বাসিন্দাদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত। এই ধরনের মন্তব্য শুধু প্রিয় জম্মু - কাশ্মীরের বাসিন্দাদের নয়, গোটা দেশের মানুষের জন্য মর্মবিদারক।' রাহুল গান্ধীও এই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
সম্প্রতি BJP সরকারের গনতন্ত্র বিরোধী আচরণের জন্য গত 6-9-19 তারিখে আরও এক IAS অফিসার 2009 ব্যাচের কর্নাটক ক্যাডারের অফিসার দক্ষিণ কানারার ডেপুটি কমিশনার এস শশীকান্ত সেন্থিল চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ইস্তফার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, 'গনতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি অক্ষত রাখতে তার পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ' আমরা জানি গনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত হল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর তা বর্তমানে কাশ্মীর থেকে একেবারে বিদায় নিয়েছে। সেখানে সংবাদপত্র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আর সেই সঙ্গে বিদেশী সংবাদ সংস্থাগুলোকে প্রশাসন পাততাডি গোটাতে বলেছে। মোবাইল পরিষেবা ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে, ফলে প্রকৃতপক্ষে সেখানে কি হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। যাহোক পরিস্থিতি যে অগ্নিগরভ তা সহজেই অনুমেয। এদিকে কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করায় এবং JNU - র অর্থাৎ জ ওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি থেকে PHD করা প্রাক্তন ছাত্রনেতরী শেহলা রসিদ - এর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ এনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দিল্লিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একদা দেশের মধ্যে IAS পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকারী শাহ ফায়শল চাকরি ছেড়ে দিয়ে KASHMIR PEOPLE MOVEMENT নামে সম্প্রতি এক নতুন দল গঠন করেছেন আর শেহলা রশিদ ঐ দলে যোগ দিয়েছেন। শেহলার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ট্যুইটারে লিখেছেন---(1) জম্মু - কাশ্মীরের মানুষেরা বলছেন, আইন - শৃংখলা রক্ষার্থে জম্মু - কাশ্মীর পুলিশের এখন আর কোনোও ভূমিকা নেই। তারা শক্তি হীন, সবকিছু এখন প্যারা মিলিটারির হাতে। CRPF এর অভিযোগের পর একজন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। SHO-দের সার্ভিস রিভলভার না দিয়ে ছোট লাঠি হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। (2) সশস্ত্র সেনারা রাতের বেলায় বাড়ির মধ্যেও প্রবেশ করছে। ছেলেদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, ঘর তছনছ করে দিচ্ছে। মেঝের উপর রেশন ছড়িয়ে ফেলছে। কেরোসিন তেল ঢেলে দিচ্ছে খাবারে। (3) সোপিযানে সেদিন চারজনকে সেনা ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে তাদের উপর টরচার করা হল। অত্যাচারের সময় সেখানে মাইক্রোফোন রেখে দেওয়া হল। তাদের উপর অত্যাচারের সময় চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ শোনানো হতে থাকে বাইরের মানুষদের। (4) সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মানুষদের প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের সংগে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। (5) রান্নার গ্যাসের আকাল সিরিষ্টি হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। গ্যাস অফিস ও বন্ধ রয়েছে।......যাহোক সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়ানো বন্ধ করতে তার গ্রেফতার জরুরি বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা দূর থেকে সম্ভব নয় তবে এই সব ঘটনা পরাধীন ভারতে ব্রিটিশের পৈশাচিক অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে দেয়। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ চরম অত্যাচার ও জুলুমের শিকার। বিশেষত বিশ্বের শক্তিধর এমনকি মাঝারি ও চুনোপুটি রাষ্ট্র এবং মিশর ও আরবের মত কতিপয় মুসলিম রাষ্ট্র ও এই জুলুমকারীদের দলভুক্ত হয়ে পড়েছে। মানবতা, মনুষ্যত্ব, মানবাধিকার ও গনতন্ত্র আজ বিপন্ন। আজকের সভ্য দুনিয়াতে আমরা দেখলাম যে, সাদ্দাম হোসেনের ইরাক পরমানু বোমা বানাচ্ছে অজুহাতে সিনিয়রের পর জুনিয়র জর্জ ডব্লিউ বুশের নেতৃত্বে সামরিক জোট প্রাচীনকাল থেকে সমমিরিদ্ধ সভ্যতার সুতিকাগার নামে খ্যাত ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিনত করে দিল। জঙ্গি আখ্যায়িত কট্টরপন্থী নেতা ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে লুকিয়ে আছে অজুহাতে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো সামরিক জোট সেখানে পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো আর দেশটাকে অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্রের পরীক্ষাগার বানালো আর সেইসাথে দেশটাকে জঙ্গী মুক্ত করতে গিয়ে ধ্বংস করলো। অথচ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ইরাকে পরমানু অস্ত্রের কোনো হদিস মিলল না কিম্বা আফগানিস্তানের কোনো গোপন গুহায ওসামার সন্ধান পাওয়া গেল না। ওদিকে আবার তৈল সমমিরিদ্ধ উন্নত মাথাপিছু আয়ের মুহাম্মদ গদ্দাফির দেশ লিবিয়াতে 'আরব বসন্তের' নামে গনতন্ত্রের সুবাতাস প্রবাহিত করতে গিয়ে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো তথা পশ্চিমি সামরিক জোট সেদেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গদ্দাফিকে অন্যায়ভাবে পৈশাচিক হত্যা করলো এবং এই দেশটাকেও ধ্বংস করলো। আর এক প্রাচীন সভ্য দেশ মুহাম্মদ আশাদের সিরিয়াকে মৃত্যুপুরীতে পরিনত করা হল আই এস অর্থাৎ ইসলামিক স্টেট জঙ্গী ঠেকাতে এবং এখানেও কয়েক লক্ষ মুসলিম মারা পড়েলেন। চিনকে কেহ কেহ ভুল করে মুসলিম বিশ্বের বিশ্বস্ত বন্ধু ভেবে থাকেন। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ চিন ও কম যাচ্ছে না, তারা সেদেশে চিনা সাংস্কৃতিকর নামে তুর্কি বংশোদ্ভূত উইঘুর মুসলিমদেরকে
অত্যাচার নির্যাতন দিচ্ছে এবং লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে সংশোধন করবার নামে ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে জঘন্যতম মুসলিম বিরোধী অত্যাচার নির্যাতন চালানো রাষ্ট্রটি হল বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ অ্যাং সু কি-র মায়ানমার রাষ্ট্র। সেখানে মুসলিম বিরোধী ভয়ংকর লোমহরষক হত্যাকাণ্ড চালানো হল এবং পনেরো লক্ষাধিক মানুষকে দেশান্তরি করা হল, তবে শোনা যাচ্ছে মায়ানমার হিন্দুদের ফেরত নেবে কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে তাদের অ্যালারজি বার হচ্ছে। এদিকে আবার দেখছি মুসলিম বিশ্বের নযনের মনি সৌদি আরবের জোট বাহিনী হুথি বিদ্রোহী দমনের জন্য ইয়েমেনে বিমান হামলা চালাচ্ছে, দেশটাকে অবরুদ্ধ করছে ফলে সেখানে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। উল্লেখ্য গত 7 সেপ্টেম্বর সৌদি যুবরাজ হবু বাদশাহ বিন সালমান রন হুংকার ছেড়ে বলেছেন , ইচ্ছা করলে মাত্র 8 ঘন্টায় ইরানকে ধূলিস্যাত করে দিতে পারি।
আর মানবতা ও মনুষ্যত্বের কলংক নেতানিযাহুর ইসরাইলের ফিলিস্তিনীদের প্রতি অত্যাচার ও নিপীড়নের কথা সমগ্র বিশ্বে সর্বজনবিদিত।ওদিকে মিশরের স্বৈরশাসক জেনারেল আল সিসি সরকার সেদেশের সর্ব প্রথম ভোটে নির্বাচিত ড. মুহাম্মদ মুরসির সরকারকে উৎখাত করে নরহত্যা জুলুম অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে।আর বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশ ভারতের কাশ্মীরে তো গনতন্ত্রের গলায় দড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাক স্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, এক কথায় কাশ্মীরবাসি আজ নেই রাজ্যের বাসিন্দা আর সেই সঙ্গে ভারতের আসাম রাজ্যের মুসলিমরা হিন্দুদের তুলনায় NRC-র জন্য ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে বেশি মাত্রায় আতংকে ভুগছে।আর এর ফল মারাত্মক হতে পারে। 


কেমন আছ ভূ-স্বরগ কাশ্মীর?
এখনো তাহলে একমাত্র পৃথিবী নামক যে গ্রহে উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব আছে সেখানে কেহ কেহ কৌতুহল বশত: জানার আগ্রহ দেখাচ্ছে আমরা কেমন আছি তা জানতে! সেই 5 আগস্ট 2019 সাল থেকে আমরা নেই রাজ্যের বাসিন্দায পরিনত হয়েছি আর এখন এখানে তো শুধুই নৈরাজ্য! রাজ্যের তকমা হারিয়ে আমরা এখন কাশ্মীর নামক কেন্দ্রীয় শাসিত অন্চলের বাসিন্দা। আমাদের ৩৭০ ধারা ও 35-এ ধারা দলিল লংঘিত, bhumi পুত্র কাশ্মীরি হিন্দু, মুসলিম, শিখ ও বৌদ্ধদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন হল না, আমাদের উপর অভূমিপুতরদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা ও লালসা চাপিয়ে দেওয়া হল।আমরা এখন মত প্রকাশের অধিকার, শান্তি পূর্ণসমাবেশের অধিকার, মৌলিক অধিকার, যোগাযোগ রক্ষার অধিকার ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার বঞ্চিত ছাদহীন কারাগারসম সেলের বাসিন্দা। আমরা সেই 1947-1948 সাল থেকে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিধন যজ্ঞের শিকার হচ্ছি। আমরা এমনকি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ যুগেও এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ি নি, তখন এক প্রকার স্বাধীন ছিলাম বলা চলে। আর এখন যা হচ্ছে সব-ই ভাগ্যের পরিহাস।বলা হচ্ছে নিরাপত্তার জন্য 80 লক্ষ কাশ্মীরবাসীর জন্য প্রায় 8 লক্ষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত আছেন অর্থাৎ 10 জন মানুষ পিছু 1 জন নিরাপত্তা কর্মী বরাদ্দ আছেন। যাহোক কাশ্মীরের 370 ধারা এবং 35-এ ধারা অবলুপ্তি পরবর্তী সম্ভাব্য অশান্তি এড়াতে নরেন্দ্র মোদী সরকার কাশ্মীরে যে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবলম্বন করেছেন যাবতীয় নাগরিক অধিকারকে খর্ব করে সেটাকে মুসলিম বিশ্ব মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না। মুসলিম বিশ্বের 57 টি দেশ নিয়ে গঠিত OIC অর্থাৎ অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন কাশ্মীর নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে দেওয়া হয় নি। প্রশাসনের ভয় ছিল যে ঈদের জন্য জমায়েত হলে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ হতে পারে। কিন্তু কাশ্মীরিদের নামাজ পড়ায় বাধা দেওয়ার অর্থ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায হস্তক্ষেপ। আন্তর্জাতিক স্তরে ধর্ম পালনের অধিকার স্বীকৃত। Universal Declaration Of Human Rights - এর 18 নম্বর অনুচ্ছেদে এই ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকৃত আর এটা কেড়ে নেওয়া যায় না। ওয়াইসির বিবৃতিতে দাবি জানানো হয়েছে অবিলম্বে জম্মু - কাশ্মীর থেকে কারফু তুলে নিয়ে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা হোক। সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দেওয়া হোক। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মান জানানো হোক। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হোক। সেইসাথে হিংসা থামাতে মারাত্মক ধরনের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করা হোক। এছাড়া আরও দাবি করা হয়েছে অবিলম্বে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের অধীন একটি আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পাঠানো হোক উভয় কাশ্মীরেই। ওয়াইসির অভিমত, জম্মু - কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফায়শলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জম্মু - কাশ্মীরের মানুষদের আত্মনিযনতরনের অধিকার স্বীকার করা হোক। কিন্তু ভারত সেই দাবিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে জম্মু - কাশ্মীরকে ভারতের অংগ বলে মনে করে। জওহরলাল নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্ব কালের সেই গনভোট প্রস্তাব স্বীকার করে না পরবর্তীকালের ভারত সরকার। বরং পাক-অধিকারভুক্ত কাশ্মীর ও ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করছে বিজেপি।এদিকে কাশ্মীরে মানবাধিকার লংঘন নিয়ে পাকিস্তানের আবেদনে তুরস্ক ও চিন সায় দিয়েছে।কাশ্মীর ইস্যু দ্বিপাক্ষিক হলে ও সেখানে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, তা আন্তর্জাতিক ইস্যু। গত বুধবার 4 সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডোমিনিক র‌্যাব ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমেন্সে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে বলেন, এক মাস আগে ভারত সরকার জম্মু - কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদার রদ বদল আনার পর সেখানে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ উঠে আসছে। এটা ভারত-পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বা দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন সব সময়ই আন্তর্জাতিক ইস্যু। উল্লেখ্য Britain হল রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী সদস্য দেশ। সেই অধিকার বলে যে কোন প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার অধিকার রয়েছে ব্রিটেনের।

ওদিকে আবার মার্কিন হাউজ আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম স্মিথ আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হরষবরধন শ্রীংলার কাছে জম্মু ও কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের উচিত আলোচনার দরজা খোলা রাখা। ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করার পর সেখানকার পরিস্থিতি এবং ভারতীয় সিদ্ধান্তের ফলে উদ্ভুত ঘটনাবলীর উপর আমরা নজর রেখে চলেছি। সেখানে জারি থাকা কারফিউ, অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন এবং লাগাতার ব্লাক আউট সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয় বলেও মন্তব্য করেছেন অ্যাডাম স্মিথ। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মধ্যস্থতা করতে চেয়ে তিনবার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুকে ভারত দ্বিপাক্ষিক (Bilateral) ইস্যু মনে করে তাই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে ভারত। তবে ট্রাম্প সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে বলেন কাশ্মীরে মারাত্মক পরিস্থিতি চলছে। তাছাড়া তিনি ইতিমধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন দুই প্রতিবেশী দেশ দীর্ঘকাল ধরে এই ইস্যুতে জটিল সমস্যায় ভুগছে। তাই আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো সমস্যার সমাধান করতে। এদিকে গত 20 আগস্ট মঙ্গলবার মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে কাশ্মীর ইস্যুতে একপ্রস্থ আলোচনা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইতিমধ্যেই কাশ্মীর ইস্যুতে মুখ খুলেছে তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ওআইসি প্রমুখ। সুতরাং বলা যায় কাশ্মীর আর দ্বিপাক্ষিক ইস্যু রইলো না, শেষমেষ আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে উঠল।
ওদিকে গত 21 আগস্ট, বুধবার কাশ্মীর ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহিল খামেযেনি বলেন কাশ্মীরের বর্তমান অগ্নিগরভ পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরাই। প্রায় সাড়ে সাত দশক আগে উপমহাদেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাশ্মীর ইস্যুতে দ্বন্দ্বকে জিইয়ে রেখে দিয়ে যায়। ভারতের সংগে ইরানের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করে ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, কাশ্মীরের বর্তমান বিস্ফোরক পরিস্থিতি এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক বিরোধের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী ব্রিটিশরা। ইরান আশা করে ভারত ইনসাফের নীতি গ্রহণ করবে। যাহোক সাংবাদিক গৌতম ঘোষের কাশ্মীর সংক্রান্ত, '370 ধারার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট' কলমে ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি যে, কাশ্মীর যদি প্রিন্সলি স্টেট না হয়ে সরাসরি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্থ কোনও প্রদেশ থাকতো, তাহলে সোজা কথায় মুসলিম প্রধান অনচল হিসেবে কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ হয়ে যেত। কারণ,ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, 1947 সালের ডেমোগেরাফিতে দেখা যায়, পুরো জম্মু - কাশ্মীরের কাশ্মীর বা উপত্যকা অংশে হিন্দু জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে। আর জম্মু অংশেও 30 %-এর বেশি হিন্দু জনগোষ্ঠী নেই।এটা বাদে সারা কাশ্মীরে 95-99 শতাংশ মুসলিম হলে এটাই হত এর সপক্ষে প্রধান যুক্তি।
ফলে দেশ ভাগের ঊষালগ্ন থেকেই কাশ্মীরের উপর পাকিস্তানের একটা সুপ্ত - বাসনা দাবি পরিলক্ষিত হতে থাকে, যদিও কাশ্মীর প্রাথমিক অবস্থায় স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু জওহরলাল নেহরুর কূটনৈতিক চালে হিন্দু রাজা হরি সিংহের ইচ্ছাতে তখনকার কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান নেতা শেখ আব্দুল্লাহের সহায়তায় '370 ধারা' নামক GIFT বা উপহারের বিনিময়ে ভারতের কাশ্মীর প্রাপ্তিকে পাকিস্তান কোনও দিন মেনে নিতে পারে নি। সুতরাং ঘটনা পরম্পরা পর্যালোচনা করে বলা যায় কাশ্মীর যেন ভারতের পড়ে পাওয়া চার আনার মতো। আর এটাই হল কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত দ্বন্দ্বের মূল কারণ। ফলে কাশ্মীরে কোনো রকম অন্যায় অত্যাচারের ঘটনা ঘটলে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মন্চে 'কাশ্মীর ইস্যু' তে ভারতের বিরুদ্ধে নেমে পড়ে। আর বর্তমান ভারতের নরেন্দ্র মোদী - অমিত শাহ জূটি কাশ্মীরের 370 ধারা এবং 35-এ ধারা রদ করে পাকিস্তানের হাতে মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিয়েছে। এই প্রসংগে একটা ঘটনা মনে রাখতে হবে যে, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু 1952 সালের 2 জানুয়ারি গনপরিষদে তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, 'কাশ্মীর ইন্ডিয়া কিংবা পাকিস্তান কারোরই সম্পত্তি নয়, কাশ্মীরি জনগণ-ই এর মালিক। কাশ্মীর যখন ইন্ডিয়ার সংগে যোগাদান, তখন আমরা অন্চলটির নেতাদের কাছে পরিষ্কার করে বলেছিলাম, আমরা তাদের জনগণের রায় শেষ পর্যন্ত মেনে চলব। যদি তারা আমাদের বের হয়ে যেতে বলে, তবে কাশ্মীর ত্যাগ করতে আমাদের কোনও রকম দ্বিধা থাকবে না........ একটা মহান জাতি হিসেবে আমরা এই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যেতে পারি না। কাশ্মীরের জনগনের উপর ই আমারা চূড়ান্ত সমাধানের ভার ছেড়ে দিয়েছি। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু আমরা আজ দেখছি কাশ্মীরে সমস্ত শর্ত, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি ও ধারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে গায়ের জোরে পদদলিত। দেশদ্রোহী বা জঙ্গী নয়, মূল ধারার ভোটে নির্বাচিত প্রাক্তন জম্মু - কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীদের পর্যন্ত জননিরাপত্তা আইনে বন্দি করে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য এই Public Sefti Act-এর দ্বারা যে কোন ব্যক্তিকে বিনা বিচারে দু বছর পর্যন্ত জেলে আটকে রাখা যায়।এটি আমাদের অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারের 1919 সালের রাউলাট অ্যাক্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা কি এখনো পর্যন্ত ব্রিটিশদের কালাকানুন পদ্ধতির অনুকরণ প্রীতি অভ্যাস ত্যাগ করতে পারব না? কাশ্মীরে মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার লংঘনের ঘটনা এখন আন্তর্জাতিক চর্চার বিষয় হয়ে পড়েছে। শোনা যাচ্ছে হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে না, ফলে ভারতের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ পর্যন্ত কাশ্মীরে যাওয়ার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন। গত 12ও13 সেপ্টেম্বর দুদিন কাশ্মীরের শ্রীনগর ও বারামুলা এলেন ওয়েলফেয়ার পার্টির সভাপতি ডা. কাশেম রসুল ইলিয়াস, সেক্রেটারি মিস সীমা মহসিন এবং সুব্রমনি আরমুগাম। তারা জানান, সেখানে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সূত্র মারফত জানতে পেরেছেন কাশ্মীরে গ্রেফতার 4000 নয়, 40 হাজারের ও বেশি হবে। কাকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট খবর কারও কাছে নেই। ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠায প্রতিটি পরিবার। পাথর নিক্ষেপকারী এই আখ্যা দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে যুবকদের। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা, সামাজিক কর্ম কর্তা, শিক্ষিত বিদ্বজ্জন, আইনজীবী,মানবাধিকার কর্মীসহ নামিদামি ব্যক্তিরাও।সব শ্রেণীর মানুষ এখন ভাবছেন তারা নিষ্পেষিত নির্যাতিত। আর তীব্র রাগ ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ সর্বত্রই বিদ্যমান। তারা আরও দেখতে পেলেন নীরবতা সেখানকার আকাশে বাতাসে, পুলিশ নয়, যেন কারফিউ জারি করে রেখেছে সেখানকার জনগণ। তারা বলছেন, যে সিদ্ধান্ত বিধানসভায় নেওয়ার কথা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নয়াদিল্লিতে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি ভাবে, জনগনকে বাদ দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে তাদের সঙ্গে। যাহোক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ, কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেহ কেহ বলছেন যে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা ও 35-এ ধারা বাতিল করার পর, কাশ্মীর সমস্যা ভারত পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলার প্রাসঙ্গিকতা এখন আর নেই। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। যেমন কিনা বাবরি মসজিদ ও রামজন্মভূমি বিতর্ক নিরসনকল্পে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান কল্পে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কোন দেশ এগিয়ে আসবে? বৃহৎ শক্তিবরগের অনেকর তো বগলে ইট, সামরিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ ও জড়িত। তাছাড়া ভারত ও কোনও হস্তক্ষেপ মানবে না। তবে একমাত্র উপায় রাষ্ট্রসংঘ। কিন্তু সেখানেও ভারতের আপত্তি। 


সম্প্রতি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক মন্তব্য করেছেন ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লংঘনের তদন্ত হওয়া দরকার। সারা পৃথিবীর নজর আজ কাশ্মীরের দিকে। 370 ধারা এবং 35-এ ধারা রদের ফলে কাশ্মীর সমস্যা আজ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।এই সমস্যা সমাধানের জন্য নীতিনিরধারন ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। আধুনিক বিশ্বে গনতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাবস্থা হল গনভোট বা plebiscite. উল্লেখ্য, 2014 সালের মার্চে অনুষ্ঠিত গনভোটের ফলাফলের মাধ্যমে ইউকেরেন ছেড়ে রাশিয়ার সংগে যুক্ত হয় স্বশাসিত ক্রিমিযা অন্চল। ওদিকে আবার ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকবে কিনা তা গনভোটের মাধ্যমে মীমাংসার পথে, ইতিহাসে তা ব্রেক্সিট খ্যাত হয়ে থাকবে। গত 10 অক্টোবর 2017 কাতালুনিযায গনভোট নেওয়া হয় যাতে স্পেন থেকে এলাকাটা আলাদা হতে পারে। স্বাধীন কাতালুনিযায পক্ষে ভোট পড়ে 92 শতাংশ ।তাছাড়া স্বাধীন ভারতেও তো জুনাগড রাজ্যটি গনভোটের মাধ্যমে ভারতভুক্ত হয়েছিল। সুতরাং কাশ্মীরের 370 ধারা এবং 35-এ ধারা যখন অবলুপ্ত করা হল তখন তো কাশ্মীরের ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে কাশ্মীরের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, শিখ ভূমিপুতরদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আর এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পিস অ্যাক্টিভিস্ট বা শান্তি কর্মী ও. পি. শাহ (L. L. B., F. C. A.) যিনি সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড প্রোগেরেস নামক সংস্থার চেয়ারম্যান সাংবাদিক Pialy Day Biswas কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'সত্যি বলতে গেলে আমার উপলব্ধিতে মনে হয়েছে কাশ্মীরের মানুষকে যদি 3 টি অপশন দেওয়া হয়, যে কাশ্মীরিরা ভারতে থাকতে পারবেন , বা পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে পারবেন, কিংবা নিজেরাই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে পারবেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই চাইবেন স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু সবাই জানেন যে সেটা সম্ভব নয়। আর, তাই এখন বেশিরভাগ কাশ্মীরিরাই ভারতের সংগে থেকে নিজেদের স্বাযত্বশাসন ( Self Administration) বজায় রাখার পক্ষে। আসলে কাশ্মীরের বিষয়টা বুঝতে গেলে আগে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। ' যাহোক আমরা দীর্ঘ সাড়ে সাত দশক অপেক্ষা করলাম কাশ্মীরকে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় বিবেচনা করে কিন্তু কোনও সুরাহা মিলল না, রক্তপাত বন্ধ হল না।কি সেনা, কি জঙ্গী, কি সাধারণ জনগণ কেহই এই ভ্রাতিরীঘাতি চলমান সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।গত জুলাই মাসে 19 তারিখে লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী G. Krishna Reddy জানিয়েছিলেন বিগত 5 বছরে জম্মু - কাশ্মীরে 960-এর বেশি সন্ত্রাসবাদী খতম হয়েছে। শহিদ হয়েছেন 413 জন নিরাপত্তারক্ষী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত এন ডি এ সরকার জঙ্গী দমনে বর্তমানে 'জিরো টলারেন্স' নীতি নিয়েছে।সুতরাং সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যে, কাশ্মীরের ব্যাপারে দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণ তথা কাশ্মীরি জনগণের মতামত গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যাচাই করার জন্য অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে রাষ্ট্রসংঘের নিরপেক্ষ তদারকিতে' গনভোট টা' পাক-ভারতের উভয় কাশ্মীরেই র নেওয়া হোক।আর তা না হলে এই উপমহাদেশে একটা অবাঞ্ছিত রক্তক্ষযী সংঘর্ষের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আর কারণটা অনুমান করাও বোধহয় মোটেই কঠিন নয়। তাছাড়া ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পরমানু অস্ত্র সমৃদ্ধ। সেই সংগে উত্তেজনার পারদটা আরও ওপরে উঠে যায় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাদের পরমানু অস্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ হুংকার দেন , 'আমরা পরমানু অস্ত্র আগে প্রয়োগ করব না, নীতি থেকে সরে এসেছি।' জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশের স্বার্থে নিজ জীবনকে বাজি রেখে 1971 সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করে পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করে দিয়ে অনেকটা দুর্বল করে দিয়েছিলেন এবং ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের Golden Temple - এ ব্লু-স্টার অপারেশন চালিয়ে পাঞ্জাবকে 'খালিস্তানী' জঙ্গী মুক্ত করেছিলেন এসব ইতিহাস আমাদের জানা আছে। পরিশেষে জানাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজী প্রায় ই বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের আতুরঘর। সুতরাং আমরাও চাই তিনিও চাইলে সন্ত্রাসের ঘাঁটি ধ্বংস করে পাক-অধিকিরিত কাশ্মীর এবং চিনের অধিকারে থাকা 'আকশাই চিন' উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। আমরা এখন নতুন থ্রিলারের অপেক্ষায় রইলাম।

(সংশোধন বাঁকি আছে )

Comments

Popular posts from this blog

Solution To Rohingya Crisis

ANTI-MUSLIM RIOTS, AN ON GOING PROCESS OF COMMUNAL INDIA TO FACE

What's Modi's Thinking and Reality ?