বুলেট দিয়ে নয়, ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে আগলাতে হবে ভালবাসা দিয়ে ।।
সম্প্রতি এক রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে, ৫৭টি মুসলিম দেশ নিয়ে গঠিত অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স অর্থাৎ ও.আই.সি. গত শনিবার ১৫ই ডিসেম্বর
দক্ষিণ কাশ্মীরে খারপোরা এলাকায় সেনা অভিযানে সাতজন সাধারণ নাগরিকের হত্যার তীব্র নিন্দা জানায় । ও.এই.সির মানবধিকার কমিশন গত সোমবার এক জরুরি বৈঠকে কাশ্মীরে নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনাকে সন্ত্রাসী কাজ বলে অভিহিত করেছে ।এবং ভারতীয় সেনাকে এই ধরণের নির্বিচারে হত্যা থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়েছে । তাছাড়া তাদের মানবধিকার শাখা ভারত সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে কাশ্মীরে একটা তথ্য অনুসন্ধানী দল পাঠাবার জন্য । উল্লেখ্য
সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে পুলওয়ামার সিরনু গ্রামে ১১ জনের মৃত্যু হয় । তারমধ্যে ৩জন ছিল জঙ্গী, ১জন সেনা ও ৭জন নিরীহ গ্রামবাসী ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায় সেদিন
সেনা বাহিনী সাধারণ মানুষকে "মানব ঢাল " হিসাবে ব্যবহার করেছিল, যেমনটি ইতিপূর্বে সেনাবাহিনী একজন মানুষকে জীপের সামনে বেঁধে এলাকায় ঘুরিয়েছিল । তবে সেনা-পুলিশ জানায় এনকাউন্টারের সময় সাধারণ মানুষ সামনে পড়ায় এত বেশি প্রাণহানি হয়ে হয়েছে । তবে একজন
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক আহমদ নাজার বলেন ভোরবেলা গ্রামবাসীদের ঘুম থেকে তুলে সকাল আটটা পর্যন্ত সেনা জওয়ানরা মানব ঢাল হিসাবে তাদের ঘোরায় এবং তারপর গুলি বর্ষণ হয় ও তার ১৫মিনিটের মধ্যেই মাত্র কয়েক ফুট দূরে গর্তে লুকিয়ে থাকা জঙ্গীর মৃত্যু হয়, আর তারপরের গুলি বর্ষণে সাতজন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন এবং ৫০জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন । কাশ্মীরে এইরকম হৃদয়বিদারক জলছবি দীর্ঘদিনের । অধ্যাপক
কবি নাসিম শিফাই-এর ভাষায় -
"আমরা কাশ্মীরি মায়েরা কাঁদতে কাঁদতে ঘুম থেকে উঠি, কাঁদতে কাঁদতে কাজ করি, আবার কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি আর ঘুমের মধ্যেও কাঁদি ।"
অপর এক
কাশ্মীরি মায়ের কথায় - "দেখুন বাইরে বেরোনো তো দূরের কথা, আমরা জানালা পর্যন্ত খুলে রাখতে পারিনা; জানালা খুললে সেনাবাহিনীর লোক গুলি করে । ২৪ ঘন্টা প্রতিটি কাশ্মীর বাসীর দরজা জানালার পাশে ফৌজিরা স্টেনগান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । অন্যান্য রাজ্যের মানুষদের মতো আমাদের কি অধিকার নেই একটু স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার !" অথচ দাবি করা হয় শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরকার কাশ্মীরে ৭লাখের অধিক সেনা মোতায়েন রেখেছেন । তাই আজ কাশ্মীরে খুদে বাচ্চাদের হাতেও দেখা যাচ্ছে পাথর, কলেজের অধ্যাপক, পি.এইচ.ডি. গবেষক ছাত্র, কিশোর স্কুল পড়ুয়া তথা শাহিদ কাপুরের অভিনীত 'হায়দার' ছবিতে একটা ছোট চরিত্রে অভিনয় করা এবং বছর তিনেক আগে কেরলে এক প্রতিযোগিতায় থিয়েটার শিল্পী হিসাবে পুরস্কার পাওয়া বছর সতেরোর 'শাকিব বিলাল'রা বিপথগামী জঙ্গীদের দলে, এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা পর্যন্ত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হচ্ছে ।
পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে ভিন্ন মতাবলম্বী, ভিন্ন মতাদর্শ ও চিন্তাধারার, ভালোমন্দ, জঙ্গি, দুস্কৃতিকারী,নানাবিধ রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক মানুষ চিরকাল ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে । আর শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রশাসন অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, কিন্তু তাইবলে কারণে-অকারণে বোলতার চাকে ঢিল মেরে পরিবেশ দূষিত করা উচিত নয় । আসলে
ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি চালু করা ইংরেজরা এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে সেই ১৯৪৮ সাল থেকে আজও কাশ্মীর যেন একটা সফট টার্গেট-এর বস্তু রয়ে গেল । তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক
সম্প্রতি ভারতের ৫টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বি.জে.পি. হেরে যাওয়ায় জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে কাশ্মীরকে ব্যবহার করা হচ্ছে । তবে বাস্তব সত্য কাশ্মীর সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে হলেও বর্তমান জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং
জাতি-ধৰ্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরি ভারতীয় । তাই ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিপুত্র কাশ্মীরি জনগণের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রূ, সহায়-সম্পদ, চাকরি-বাকরি, কাজ-কর্ম এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার নিরাপত্তা অবশ্যই দিতে হবে এবং সেইসঙ্গে কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের
৩৭০ ধারা মোতাবেক সুযোগ সুবিধা বজায় রাখা, কাশ্মীরিদের জন্য বিশেষ রক্ষাকবচ
আর্টিকেল ৩৫-এ অক্ষুন্ন রাখা জরুরি । আর সেইসঙ্গে
" সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন " - "আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার এক্ট" বা "আফ সপা" প্রত্যাহার করার বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে - কারণ এই কালা কানুনের বলে সেনাবাহিনী নির্বিচারে কাউকে হত্যা করতে পারে কিন্তু তারজন্য সেনাবাহিনীকে কোনো প্রকার জবাবদিহি করা যায়না । পরিশেষে জানাই
বন্দুক, বুলেট, পেলেট গান দিয়ে নয়, ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরকে আগলে রাখতে হবে ভালোবাসা দিয়ে ।।
আমার ব্লগকে সাবস্ক্রাইব করুন ।। টুইটারে ফলো করুন ।
Comments
Post a Comment